২২ এপ্রিল ২০২৫ - ২৩:১৭
Source: Parstoday
ইয়েমেনের বিররুদ্ধে ওয়াশিংটন ও আবুধাবির নতুন ষড়যন্ত্র

পার্সটুডে - ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলার তীব্রতা বৃদ্ধি এবং কৌশলগত হুদাইদা বন্দরে সংযুক্ত আরব আমিরাত-সমর্থিত বাহিনীর স্থল আক্রমণের গুঞ্জনের ফলে লোহিত সাগর অঞ্চল বর্তমানে একটি নতুন সংকটের দ্বারপ্রান্তে।

ইয়েমেনে মার্কিন সামরিক হামলা শুরু হয় ২০২৫ সালের ১৫ মার্চ। আনসারুল্লাহকে দুর্বল করা এবং এই অঞ্চলে ওয়াশিংটনের স্বার্থ টিকিয়ে রক্ষার লক্ষ্যে পরিচালিত এই হামলাগুলো ইয়েমেনের সামরিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোকে টার্গেট করা হয়েছে। এতে করে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এবং মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। সোমবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে হুদাইদাহ এবং সানার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশগুলিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত-সমর্থিত ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্তর্বর্তী পরিষদের সশস্ত্র ব্যক্তিদের স্থল আক্রমণের আশঙ্কা বেড়েছে। মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের বিমান সহায়তায় এই বাহিনী কৌশলগত বন্দর হুদাইদা দখলের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা ইয়েমেনের লোহিত সাগরে যাওয়ার একমাত্র প্রধান পথ।

পার্সটুডে-র এই প্রবন্ধে হুদাইদা বন্দরের গুরুত্ব এবং ইয়েমেনের উপর স্থল আক্রমণের সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

ইয়েমেনের প্রাণশক্তি আল-হুদাইদাহ

ইয়েমেনি জাতীয় ঐক্যমোর্চার সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন হুদাইদা বন্দর কেবল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথই নয় বরং দেশে মানবিক সাহায্য প্রবেশের প্রধান পথও বটে। হুদাইদার ওপর অবরোধ লক্ষ লক্ষ ইয়েমেনিদের জন্য দুর্ভিক্ষ এবং ওষুধের ঘাটতির হুমকির মুখে ফেলেছে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করে দিয়েছে যে এই পদক্ষেপ মানবিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।

আঞ্চলিক পক্ষগুলোর মধ্যকার স্বার্থের দ্বন্দ্ব

ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্তর্বর্তী পরিষদকে সমর্থন করে, সংযুক্ত আরব আমিরাত লোহিত সাগরে তার প্রভাব জোরদার করতে এবং সৌদি আরবের সাথে প্রতিযোগিতা করতে চায়। বিপরীতে, ইয়েমেনের সাথে আট বছরের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া সৌদিরা নতুন কোনও অভিযানে নামতে ইচ্ছুক নয়। এই স্বার্থের দ্বন্দ্ব আমেরিকার দুই মিত্রের মধ্যকার সহযোগিতাকে জটিল করে তুলেছে।

বিস্তৃত আঞ্চলিক প্রভাব

বাব আল-মান্দাব প্রণালীর নিয়ন্ত্রণের কারণে ইয়েমেন বিশ্ব জ্বালানি বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অব্যাহত সংঘাত এই গুরুত্বপূর্ণ করিডোরকে ব্যাহত করতে পারে এবং জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে, ইয়েমেনে জনপ্রতিরোধ শক্তিশালী হয়েছে এবং বিদেশী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ ঐক্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া এই সংঘাতগুলি শুধু যে কেবল ইয়েমেনকে অস্থিতিশীল করবে তাই নয় একইসাথে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও তৈরি করবে।

প্রতিরোধকে এগিয়ে নিতে আনসারুল্লাহর ভূমিকা

আল-আকসা তুফান অভিযান দেখিয়ে দিয়েছে যে আনসারুল্লাহ হচ্ছে লোহিত সাগরে প্রতিরোধের অক্ষের মূল উপাদান। এই অঞ্চলে ৩৫০ টিরও বেশি অভিযানের মাধ্যমে, ইয়েমেনিরা বাণিজ্যিক জাহাজের রুট ঘুরিয়ে দিয়েছে এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনের ইলাত বন্দরকে অচল করে দিয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে প্রবেশ করেছে এবং ইসরাইলি প্রক্সি হিসেবে ইয়েমেনি লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালিয়েছে।

পরিশেষে, এটা বলা যায় যে হুদাইদার উপর সম্ভাব্য আক্রমণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ যুদ্ধ যা কিনা মানবিক সংকট এবং ব্যাপক আঞ্চলিক উত্তেজনার দিকে নিয়ে যেতে পারে।#

342/

Your Comment

You are replying to: .
captcha